সন্তান ( গল্প  )

তাতান তোমাকে বলেছি না,খাবার পর প্লেটটা সিঙ্ক এ রেখে আসবে,রোজ তোমাকে একই কথা কেন বলতে হয় বলো তো?আর দাদান,ঠাম্মারও খাওয়া হয়ে গেছে ওদের প্লেটগুলোও রেখে এসো। দেখতে পাচ্ছো তো ছবি পিসি আজ তিন দিন কাজ করতে আসছে না,আমি সব বাসন ধূয়ে তারপর যাচ্ছি,তুমি ততক্ষণ দাদান,ঠাম্মার ঘরে জলের বোতল রেখে শুয়ে পরো,কাল আবার আমার স্কুল আছে।' 

সন্তান ( গল্প  )
সন্তান ( গল্প  ), story bangla, bangla story new

সন্তান ( গল্প  )

তাতান তোমাকে বলেছি না,খাবার পর প্লেটটা সিঙ্ক এ রেখে আসবে,রোজ তোমাকে একই কথা কেন বলতে হয় বলো তো?আর দাদান,ঠাম্মারও খাওয়া হয়ে গেছে ওদের প্লেটগুলোও রেখে এসো। দেখতে পাচ্ছো তো ছবি পিসি আজ তিন দিন কাজ করতে আসছে না,আমি সব বাসন ধূয়ে তারপর যাচ্ছি,তুমি ততক্ষণ দাদান,ঠাম্মার ঘরে জলের বোতল রেখে শুয়ে পরো,কাল আবার আমার স্কুল আছে।' 
রাতের খাবার খেতে খেতে কথাগুলো বলল পিয়া, ছেলে তাতানকে। শ্বশুর,শাশুড়ি ,বর কে খাবার পরিবেশন করে তারপর ও খেতে বসে।এ বাড়িতে আবার টেবিলে খাবার দিয়ে যে যার মতো করে নিয়ে নেবে সেটা কারুর পছন্দ নয়। তাই সবাইকে গুছিয়ে খেতে দিয়ে তারপরই রোজ খেতে বসে পিয়া।তাই সকলের খাওয়া শেষ হয়ে গেলেও ওর হয় নি। 
শাশুড়ি কিঞ্চিত বিরক্ত হয়েই বলল,"কি জানি বাবু এই ছোট ছেলেটাকে দিয়ে এত ঘরের কাজ করানোর কি দরকার? কজের লোক তো কামাই করেই। সেরকম হলে চাকরি ছেড়ে দিলেই পারো,তোমার টাকাতে তো আর আমাদের সংসার চলে না।আমার ছেলে যথেষ্ট রোজগার করে"।
" মা আপনার নাতি আর ছোট নেই,তেরো বছর হলো,আর পড়াশোনার সাথে সাথে  লাইফ স্কিল গুলোও তো শিখতে হবে ওকে। আর ছেলেদের কাজ আর মেয়েদের কাজ বলে কিছু হওয়া উচিত নয় ।"
পিয়া খুব মৃদু স্বরে বলল।
এবার পিয়ার বর, সায়ন খুব তাচ্ছ্যিলের সুরে বলল "ছেড়ে দাও মা, ও তো একাই ছেলে মানুষ করছে তোমরা তো করো নি,সেই জন্য আমি আজ এত বড়ো একটা চাকরি করি। আর এইসব বাড়ির কাজ না আমার মা ঠাকুমাই করতো। তাতে কিছু আমি খারাপ মানুষ হয়নি। দুটো বড় এজেন্সির অফার এখনো আমার কাছে পড়ে আছে?জানো নিশ্চয়ই?"
"একটু ভুল হলো সায়ন,ছেলে মানুষ করছে নয়, সন্তান মানুষ করছে বলো। আমি চাই না ওর মধ্যে এখন থেকে কোন লিঙ্গ বৈষম্য ঢুকুক' গভীর  প্রত্যয়ের সাথে কথাগুলো বলল পিয়া।"
"ঠিক আছে এই জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন নিয়ে লেকচারটা না হয় স্কুলেই দিও,আমরা তো কেউ তোমার স্টুডেন্ট নয় ,আমার কাল একটা ইম্পট্যান্ট প্রেজেন্টেশন আছে,আমি উঠলাম।" ঠোঁটের মাঝে এক অদ্ভুত তিক্ততা নিয়ে কথাগুলো বলে সায়ন উঠে গেলো।
পিয়া ভাবছে প্রত্যেক মেয়েকেই বোধহয় বিয়ের পর আবার একটা পরীক্ষা দিতে হয় মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়ার পরীক্ষা। স্কুল-কলেজের শিক্ষাগত যোগ্যতা বোধহয় এক্ষেত্রে খুব একটা কাজে লাগে না।সে তো বিয়ের আগে থেকেই চাকরি করত,সেটা জেনেই, কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে তাদের বিয়ে হয়েছিল,কিন্তু তারপরেও এই কথায় কথায় চাকরি ছাড়ার কথা তাঁকে শুনতে হয়। শুধু তাকেই কেন,বিয়ের একদম পরে পরেই তাঁর মা,বাবা কেও কিছু কথা শুনতে হয়েছিল। বিয়ের সময় বলা হয়েছিল তাদের কোন দাবী নেই কিন্তু তারপরেও শুনতে হয়েছিল ,ননদের শাড়িটা আরও একটু দামী হওয়া উচিত ছিল,দান বাসনের থালাগুলো খুব ছোট,ছেলের বাড়ির লোকেদের আরও একটু ভালো করে আতিথেয়তা করতে হয়  এইসব। বিষণ্ণতায় ভরে গিয়েছিল মন এসব শুনে ,বলেও ছিল সায়ন কে,শুনে সায়ন বলেছিল,"মেয়ের বাড়ির লোকেদের ছেলের বাড়ির লোকেদের কাছে একটু মাথা নামিয়েই থাকতে হয়"।
সায়নের গলাতে মা-বাবাকে সমর্থনের প্রচ্ছন্ন আশ্বাস।
অবাক হয়ে গেছিল পিয়া এই কথা শুনে। উচ্চ শিক্ষিত ভদ্র ভালো উপার্জনশীল ছেলে দেখে তাঁর বাবা,মা বিয়ে দিয়েছিল কিন্তু ছেলেটির মানসিকতা জানার কোনো সুযোগ তাঁর বাবা মায়ের ছিল না।কোন কথা বলেনি সেদিন পিয়া সায়নের কথার প্রত্যুত্তরে, ইচ্ছা হয়নি,শুধু মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিল যদি কোনদিন তার পুত্র সন্তান হয় তবে তাকে এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজের এবং পৌরুষত্ত্বের মিথ্যা অহংকার থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে শুধু একজন ভাল মানুষ হিসেবে তাকে বড় করবে, শুধু পুরুষ মানুষ হিসাবে নয়।সে যে কষ্টটা পেয়েছে আরেকটি মেয়েকে এই কষ্টটা সে পেতে দেবে না। সেই চেষ্টাই তো করে যাচ্ছে। 
পিয়ার স্বামী সায়ন রায় আসলে এক বিখ্যাত বিজ্ঞাপন এজেন্সির কপি রাইটার । বিজ্ঞাপন জগতে তার খুবই নামডাক। সে বিখ্যাত কনভেন্ট স্কুলে পড়াশোনা করেছে,পড়াশোনা  তে ছোট থেকেই খুব ভালো ,ক্রিকেট খেলেও খুব ভালো। কিন্তু মানসিক বিকাশ, হয়েছে কি?
তবে পিয়া জানে শাশুড়ি মা মুখে যাই বলুক আসলে নাতি যে রোজ তাদেরকে রাত্রে জলের বোতল দিয়ে আসে ,মনে করে ওষুধ খাওয়ার কথা বলে,মশারী গুজে দেয়, মাঝে মাঝে দাদুকে কফি করে খাওয়ায়, এতে শ্বশুর শাশুড়ি মনে মনে বেশ প্রসন্নই হন, মনে মনে নাতির জন্যে কিঞ্চিৎ গর্ববোধ ও করেন, মুখে হয়তো বলেন না।
পিয়া নিজের রান্নাঘরের কাজ শেষ করে ওপরে গিয়ে দেখল সায়ন নিজের ল্যাপটপে বসে কাজ করছে বিছানায় বসে,আর তাতান পাশে শুয়ে ঘুমোচ্ছে। পিয়া বলল "তুমি কি এখন অনেকক্ষণ কাজ করবে ?"
সায়ন ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে গলায় বেশ কৌতুক নিয়ে বললো "আমি একটা ইম্পট্যান্ট প্রেজেন্টেশন রেডি করছি দেখতেই তো পাচ্ছো, অবশ্য তুমি আর বিজ্ঞাপন বা প্রেজেন্টেশন সম্বন্ধে কি বুঝবে? পড়াও তো একটা বাংলা মাধ্যম স্কুলে ইতিহাস। "
"সেটা ঠিক ইতিহাস পড়াই, বিজ্ঞাপন বুঝি না, কিন্তু দেখি তো, তাই এটা বুঝতে পারি যে মায়ের মুখ সব সময়ই শুভ হয় তার জন্য কোনো বিশেষ ব্র্যাণ্ডের  সাবান মাখার দরকার হয় না অথবা সব  কালো মেয়েকেই যে ক্রিম মেখে ফর্সা হতে  হবে অথবা প্রত্যেক মেয়েকেই যে উজ্জ্বল ত্বকের, লম্বা চুলের অধিকারী হতে হবে এমন কোন মানে নেই। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জোর করে এগুলো তোমরা ঢোকানোর চেষ্টা করো মেয়েদের মধ্যে।এখনো বিজ্ঞাপন জগতে মেয়েদেরকে পণ্য বস্তু ,ভোগ্য বস্তু হিসেবেই দেখা হয়। ঠিক কিনা বল ?'
 "হয়ত আংশিক ভাবে ঠিক কিন্তু বিজ্ঞাপনের ব্যাপারটা সবটাই আমাদের হাতে নেই ,এটা  কোম্পানির পলিসি ।"
"মানলাম ,কিন্তু কোম্পানির সিইও রা তো বিজ্ঞাপন তৈরি করতে পারবেন না সেটা তোমাদেরকেই করতে হবে। যাক সে কথা, আমি একটা অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলব ভাবছিলাম, তাতানের ফিজিক্স, কেমিস্ট্রির নাম্বার খুব কম এসেছে এবারে,আমারও ওকে পড়াতে একটু অসুবিধে হচ্ছে, ক্লাস এইট হয়ে গেল তো ,আফটার অল আমি তো আর্টস স্টুডেন্ট।"
"ঠিক আছে একটা কাজ করো, তাতানের স্কুলের বন্ধু হিয়া তো একটা প্রাইভেট টিচারের কাছে পড়তে যায় ,সন্ধ্যার দিকে, আমার সাথে প্রায়ই দেখা হয়,শুনেছি খুব ভাল পড়ান উনি। ওনার কাছে পড়তে দিয়ে দাও।আর হিয়ার মা তো তোমার খুব ভালো বন্ধু, ওর সাথে কথা বলে সব ঠিক করে নাও। বাড়ি থেকে তো বেশি দূর নয়, তাতান চাইলে সাইকেলে যেতে পারে বা আমি গাড়িটাও পাঠিয়ে দিতে পারি সঙ্গে শুধু একটা ফোন দিয়ে দিও।"
"ঠিক আছে আমি হিয়ার মা মানে রিমার সঙ্গে কথা বলব এ ব্যাপারে। কালকেই ফোন করবো।"
"সেইমতো রিমার সাথে কথা বলে তাতানের পড়া ঠিক করলো পিয়া। স্যার সপ্তাহে দুদিন সন্ধ্যেবেলা পড়াবেন। আসলে সন্ধ্যেবেলা উনি দুটো ব্যাচ পড়ান একটা পাঁচটা থেকে  সাতটা আর একটা সাতটা থেকে নটা। তাতান দের   সাতটা থেকে নটা। সেইমতো ভর্তি হলো তাতান, দুটো-তিনটে ক্লাস করার পর তাতান বলল যে তার খুব ভালো লাগছে, তবে ছাত্র ছাত্রী অনেক বেশী। স্যারের ক্লাসের সময় ফোন সুইচ অফ করে রাখতে হয়।তাই পিয়া তাতান কে বলে দিয়েছে স্যারের বাড়িতে পৌঁছে গিয়ে ফোন করে ওকে একটা খবর দিয়ে দিতে আবার স্যারের পড়নো হয়ে গেলে একবার ফোন করে দিতে। বেশ ভালোই চলছিল ক্লাস কিন্তু তিন চার দিন পর একদিন তাতান এসে বলল পিয়াকে  "মা তুমি রিমা আন্টির সাথে একটু কথা বলো না, রিমা আন্টি রোজ সাড়ে নটা বাজলেই স্যার কে ফোন করে, স্যার কখন ছাড়বেন, আমরা এসে গেছি,  ফ্ল্যাটের নিচে দাঁড়িয়ে আছি খুব দেরি হয়ে গেলে অটো পাওয়া যায় না। আজকে ভেলোসিটির অঙ্ক গুলো শেষ হয়ে যেত কিন্তু শুধু রিমা আন্টি ফোন করেছিল বলে হল না। কই তুমি তো ফোন করো না।আর মা, হিয়া তো আমার চেয়ে ভালো সাইকেল চালায় তাহলে ও তো সাইকেল নিয়েই যেতে পারে আমার মত,শুধু শুধু রিমা আন্টি কে যাওয়ার কি দরকার? ফ্লাটের নিচে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়,খুব মশা ওখানে। অবশ্য অনেক আন্টিরা, আঙ্কেলরাই আসে। বিশেষ করে যেসব মেয়েরা পড়ে  তাদেরকে  নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা ছেলেরা তো বেশিরভাগই সাইকেল নিয়েই যাই।"
এবার পিয়া তাতান কে তার মতো করে বোঝালো কেন রিমা আন্টি রোজ হিয়াকে  নিতে যায়,কেন রিমা আন্টি  স্যার কে ফোন করে ,তাকে করতে হয় না,সে বোঝালো তার মত করে। তাতান ও মোটামুটি বুঝতে পারল শুধু জিজ্ঞাসা করল 'মা তুমি যখন পড়তে যেতে তখনও কি দাদু বা দিদুনকে তোমাকে আনতে যেতে হতো ?
পিয়া বলল "হ্যাঁ তাকেও দাদু না হয় দিদুন রাত্রের দিকে পড়া থাকলে বা অন্য কোন কাজে গেলে ,আনতে যেত।" তাতান বুঝল। 
কিন্তু পিয়া ভাবছে একটা জেনারেশন পরেও সমাজে কিছু পরিবর্তন আসেনি তার সময়ে যেটা ছিল আজও সেটাই চলছে।একটা তেরো বছরের মেয়ে রাত্রি সাড়ে নটা, দশটা তে একলা বাড়ি ফিরতে পারবে না।সেই নিরাপত্তা সমাজ তাঁদের কে দিতে পারেনি,এটা বোধ হয় তাদের সকলেরই অক্ষমতা, ব্যর্থতা।
এরপর একদিন হলো সমস্যা,তাতান ন'টার সময় পড়া শেষ করে তাঁকে ফোন করল যে মা আমি বেরোচ্ছি,স্যারের পড়ানো হয়ে গেছে কিন্তু প্রায় দশটা বাজতে চলল এখনো তাতান বাড়ি ফেরেনি।সায়ন বাড়ি নেই।সে অফিসের ট্যুরে গেছে।পিয়া অনেকবার ফোন করছে তাতান কে কিন্তু ফোন সুইচ অফ, বাড়িতে সবাই চিন্তা করছে।স্যার ন'টাতেই ছেড়ে দিয়েছেন কিন্তু তাহলে তাতান এখনো বাড়ি ফিরছে না কেন ? 
এরপর পিয়ার শ্বশুর মশাই বললেন, "বৌমা আমি একবার  রাস্তায় বেরিয়ে দেখে আসি এইভাবে আর বাড়িতে বসে থাকতে পারছি না । "
শ্বশুরমশাই তৈরি হয়ে বেরোবেন, ঠিক সেই সময়ই তাতান সাইকেল নিয়ে বাড়ি ঢুকলো । সবাই সমস্বরে জিজ্ঞাসা করল, কি হয়েছিল, তুই ঠিক আছিস তো, এত দেরি হল কেন, ফোন সুইচ অফ কেন ?
মা, ঠাম্মা "একসাথে এত প্রশ্ন করলে আমি কি করে উত্তর দেব? এক এক করে বলছি। আমার ফোনে চার্জ ছিলো না তাই ফোনটা সুইচ অফ হয়ে গেছে , সকালে ভুলে গেছি চার্জ দিতে আর আমি একদম ঠিক আছি আমার কিছু হয়নি । "
" তাহলে এত দেরি হল কেন?"
সেটাইতো বলছি ঠাম্মা, আমাদের সাথে পড়ে একটা মেয়ে নাম, তরী। ওর বাবা ওকে প্রতিদিন নিতে আসে স্কুটারে করে। আজও আঙ্কেল আসছিল কিন্তু রাস্তার মধ্যে স্কুটারটা হঠাৎ খারাপ হয়ে যায়। আঙ্কেল ফোন করেছিল তরীকে বলেছিলে একটু ওয়েট করতে, সামনের দোকানে স্কুটার ঠিক করিয়ে আঙ্কেল আসছে কিন্তু ততক্ষণে তো অন্য আন্টি,আঙ্কেলরা বাড়ি চলে গেছে আমরা যারা সাইকেলে আসি,তাঁরা সাইকেলের চাবি খুলছিলাম কথা বলছিলাম তারপর দেখলাম তরী একা দাঁড়িয়ে আছে তখন ওকে জিজ্ঞাসা করতে ও সবটা বললো, তাই আমি আমার বন্ধুদের বললাম যে যতক্ষণ না আঙ্কেল আসছে আমরা সকলে মিলে ওয়েট করি। তুমি বলেছিলে না মা সেদিন আমাকে, বুঝিয়ে ছিলে, তরীর তো এত রাত্রে রাস্তায় একলা থাকাটা ঠিক হতো না তাই আমরা সকলে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আঙ্কেল যখন চলে এলো আমরাও চলে এলাম তাই দেরি হল।"
"ঠিক করেছি  কিনা বল মা?"
এবার দাদু বলল "একদম ঠিক করেছো তাতান, এটাই তো করা উচিত।"
ঠাম্মা একটু গর্ব করে বলল "কোন বংশের ছেলে দেখতে হবে তো।নাও নাও এবার তাড়াতাড়ি জামা কাপড় ছেড়ে হাত মুখ ধুয়ে খেতে বোস।"
শুধু পিয়া চুপ করে রইল।
তাতান মায়ের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, "তুমি কি রাগ করেছ, মা? আমি কি কিছু ভুল করেছি?"
"না,না তাতান তুমি যা করেছ ঠিক করেছো।" পিয়া বলল।
কিন্তু পিয়া এরপর ভাবতে লাগলো তাতান তো বুঝলো যে তার এক সহপাঠিনী  রাত্রি দশটার সময় রাস্তায় একলা থাকতে পারে না, কিন্তু সে বা তার বন্ধুরা থাকতে পারে। সহপাঠিনীকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য তাদেরকে থাকতে হয়। এই ঘটনার পর কোথাও তাতানের অবচেতন মনে পুরুষত্বের অহংকার জেগে উঠবে না তো?সে মনে করবে না তো যে একটা মেয়েকে রাত্রিবেলায় রক্ষা করতে একজন পুরুষকে লাগে আমাদের সমাজে? 
আজ যে পিয়া লক্ষ্য করলো তাতানের মুখে আত্মঅহংকারের একটা হালকা ছাপ, মুখে যুদ্ধ জয়ের হাসি। 
তাহলে কি হেরে যাবে পিয়া এই সমাজ ব্যবস্থার কাছে?

লেখিকাঃ______সুস্মিতা রায়চৌধুরী