বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে যে অফার কখনোই দেওয়া হয়নি
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে যে অফার কখনোই দেওয়া হয়নি

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে যে অফার কখনোই দেওয়া হয়নি
খুব বেশি দিন আগের কথা নয় যে, আমাদের সবার বাসায় হারিকেন ছিল জরুরি নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। এ জিনিস ছাড়া আমাদের একদিনও চলত না। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তার সরকারকে যে আমরা একরকম ভুলতেই বসেছিলাম এই চরম উপকারী বন্ধুকে। কিন্তু আমাদের এখনকার বাস্তবতা ভিন্ন। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা প্রতিনিয়ত হচ্ছে। এ মূহুর্তে আমাদের আমাদের ভাবতে হবে, কীভাবে আমরা তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর গ্রাহককেন্দ্রিক বিদ্যুৎ সাশ্রয় নিশ্চিত করতে পারি।
একটু গভীরভাবে খেয়াল করলে দেখব, আমরা আমাদের বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি সেবাগুলোর ক্ষেত্রে সম্পূরকভাবে গ্রাহককেন্দ্রিক তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল রূপান্তর এবং গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করতে এখনো পারিনি। উদাহরণস্বরূপ বিশ্বজুড়ে টেলিকম/ফিনটেক খাতে প্রথমে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনের জন্য নানা ধরনের আকর্ষণীয় অফার দেওয়া হয়। গ্রাহক হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার পর তাঁরা যেন দীর্ঘমেয়াদি গ্রাহক হিসেবে সেবা নেন, সে জন্য আরও আকর্ষণীয় অফার দেওয়া হয়, যার পক্ষে-বিপক্ষে অনেক যুক্তি-তর্ক থাকলেও বিপণনের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে অফার চর্চা। আবার কোনো কোনো কোম্পানি শুধু তাদের অতুলনীয় গ্রাহকসেবা দিয়েই গ্রাহকদের আস্থা অর্জন, নিবন্ধন এবং দীর্ঘমেয়াদি গ্রাহক নিশ্চিত করছে। এখানে খুবই লক্ষণীয় যে তারা তথ্যপ্রযুক্তি এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবানকশার সর্বাধিক ব্যবহার করছে।
আমাদের বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি সেবাগুলো কখনোই ভোগ্যপণ্য হিসেবে গ্রাহকদের কাছে মূল্যায়িত হয়নি। যদি হতো, তাহলে তাঁরা এর ব্যবহারেও সাশ্রয়ী হতেন। যেভাবে তাঁরা হন কোনো কাপড় ধোয়ার সাবানের প্রতি সাশ্রয়ী। এর কারণ, আমাদের বিদ্যুৎসেবা থেকে কখনোই উদাহরণস্বরূপ নিম্নোক্ত অফার দেওয়া হয়নি, যাতে হয়তো গ্রাহকেরা সাশ্রয়ের প্রতি আগ্রহী হতে পারতেন—এক. আগের মাসের চেয়ে ১০ শতাংশ কম বিদ্যুৎ খরচ করলে ১০ শতাংশ বিল ছাড়
দুই. আগের ৩ মাসের চেয়ে ২০ শতাংশ কম বিদ্যুৎ খরচ করলে ২০ শতাংশ বিল ছাড়
তিন. আগের ৬ মাসের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম বিদ্যুৎ খরচ করলে ৩০ শতাংশ বিল ছাড়
চার. আগের ১২ মাসের চেয়ে ৫০ শতাংশ কম বিদ্যুৎ খরচ করলে ৫০ শতাংশ বিল ছাড়
বিদেশে বসে আমার চার বছরের বাচ্চাও তার স্কুলে শিখেছে—পানি সাশ্রয় করো, বিদ্যুৎ সাশ্রয় করো, বাথরুমে একটি টিস্যু কম ব্যবহার করো। জানি না, আমাদের ১০০ শতাংশ জনগণকে সেটা শেখাতে কত দিন লাগবে। তবে এটা সত্য যে বাঙালি কারও শাসনে-বারণে তার চর্চা পরিবর্তন করবে না। তাই আমাদের আঙুল বাঁকা করতে হবে এবং এর সমাধান খুঁজতে পারি হয়তো নিম্নোক্ত উপায়ে—
এক. তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাপক গ্রাহককেন্দ্রিক পরিষেবা নকশা
দুই. বিদ্যুৎ সাশ্রয়মূলক গ্রাহকসেবা বয়সভিত্তিক বিপণন প্রচারণা
তিন. পাড়ায়, মহল্লায়, ইউনিয়নে, থানায়, জেলায়, বিভাগে শ্রেষ্ঠ বিদ্যুৎ সাশ্রয়কারী পুরস্কার
চার. জাতীয় শ্রেষ্ঠ বিদ্যুৎ সাশ্রয়কারী পুরস্কার
এখানে বলাই বাহুল্য যে দুর্নীতিপরায়ণ প্রশাসন এসব নিয়ে ভাবার বা এগুলো বিবেচনা করার সময় পাবে না। কারণ, তাদের আসল লক্ষ্যটাই তো ভিন্ন। যা হোক, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমাদের প্রশাসনে এখনো ভালো লোক আছেন যাঁরা এখনকার বিদ্যুৎ সাশ্রয় নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা নিয়ে ভাববেন। পরিশেষে আমার আঞ্চলিক ভাষায় বলব, ‘আমাগো আর হাতে হ্যারিকেন ধরাইয়া দিয়েন না ভাই, হের চাইতে কিছু অফার দেন।’
মো. সানজিদ হোসেন ডিজিটাল রূপান্তর পরামর্শদাতা এবং বিপণন পরামর্শকারী