খুলনার এ দৃষ্টান্ত দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ুক

খুলনার এ দৃষ্টান্ত দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ুক

খুলনার এ দৃষ্টান্ত দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ুক
খুলনার এ দৃষ্টান্ত দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ুক

খুলনার এ দৃষ্টান্ত দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ুক


করোনা মহামারি ও এরপর ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট নাজুক বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশে দেশে খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টি এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নিজেদের খাদ্যচাহিদা নিজেরাই মেটানোর বিষয়টি বেশ আলোচিত হচ্ছে। যাকে বলা হচ্ছে খাদ্য-সার্বভৌমত্ব।

অথচ একসময় এ দেশের কৃষিভিত্তিক সমাজ এ কাজই করে এসেছে। যুগ যুগ ধরে দেশি বীজ সংরক্ষণ করে কৃষিকে আগলে রাখেন তাঁরা। তবে বিদেশি বীজের আগমন ও বাজার অর্থনীতির কারণে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক দেশি বীজ। এমন পরিস্থিতিতে দেশি বীজ রক্ষায় ঘরে ঘরে বীজভান্ডার গড়ে তুলেছেন খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার নারীরা। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে বেশ সাড়া ফেলেছে।

কৃষির সঙ্গে নারীর সম্পর্ক চিরায়ত। ফলে বীজ সংরক্ষণের গুরুত্ব তাঁরা ছাড়া আর কে বেশি বুঝবে। এ জন্যই আমরা দেখি বটিয়াঘাটার নারীরা দেশি বীজ সংরক্ষণের দিকে ঝুঁকতে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, শস্য ও সবজির নানা পদের বীজ সংরক্ষণ করছে উপজেলাটির চার ইউনিয়নের ১৭টি গ্রামের অন্তত ২০০টি পরিবার। এসব পরিবারের নারীদের কাছে ৮০ থেকে ২৫০ প্রজাতির দেশি জাতের বীজ সংরক্ষিত আছে। এমনকি বিপন্ন উদ্ভিদের বীজও সংরক্ষণ করে রাখেন তাঁদের অনেকে।

এসব নারী শুধু দেশি জাতকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করছেন না, ভবিষ্যৎ সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতেও ভূমিকা রাখছেন। কারণ, দেশি জাতের বীজ থেকে হওয়া গাছে পোকা কম হয়। এ কারণে তাতে সার ও কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন হয় না তেমন। ফলে ওই পরিবারগুলোর নিরাপদ সবজির চাহিদা মিটছে। এসব বীজ শুধু নিজেরাই কাজে লাগাচ্ছেন না, কেউ চাইলে বিনা মূল্যে তাঁদেরও দিচ্ছেন। এর মাধ্যমে দেশি বীজের ধারণা ছড়িয়ে দিচ্ছেন অন্যদের মাঝেও।

বটিয়াঘাটার নারীদের ভাষ্য, হাইব্রিড বীজের অপকারিতা থেকেই তাঁরা দেশি বীজ সংরক্ষণের দিকে ঝুঁকেছেন। তা ছাড়া মা-দাদি-নানিদেরও এভাবে বীজ সংরক্ষণ করতে দেখেছেন তাঁরা।খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) অধ্যাপক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, হাইব্রিডের কারণে দেশি শাকসবজি, ফলমূল, শস্য হারিয়ে যেতে বসেছে। সে ক্ষেত্রে ওই নারীদের এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এতে দেশি জাতটি টিকে থাকবে। অন্যদিকে কৃষকদের ওপর বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির দৌরাত্ম্য কমবে।

একসময় বাংলাদেশকে কৃষিপ্রধান দেশ বলা হতো। কৃষির সেই জৌলুশ এখন আর নেই। আমরা চাই না দেশি বীজও হারিয়ে যাক। এর জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকেই। এর জন্য বড় অনুপ্রেরণা হতে পারেন বটিয়াঘাটার নারীরা। এ অসাধারণ কাজটির জন্য তাঁদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইল।