অভিনেত্রী ( গল্প )
কানায় কানায় পরিপূর্ণ হল। এক এক করে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন পুরস্কার প্রাপকদের হাতে। এরপর ঘোষণা হল এই বছর বেস্ট অ্যাক্ট্রেস হিসাবে জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছেন 'সোহিনী সেন'।

অভিনেত্রী ( গল্প )
কানায় কানায় পরিপূর্ণ হল। এক এক করে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন পুরস্কার প্রাপকদের হাতে। এরপর ঘোষণা হল এই বছর বেস্ট অ্যাক্ট্রেস হিসাবে জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছেন 'সোহিনী সেন'। তাঁর অভিনীত 'মল্লিকা' সিনেমাটির জন্য। এক বিখ্যাত নৃত্যশিল্পীর জীবনী অবলম্বনে তৈরি এই সিনেমাটি। নারী কেন্দ্রিক সিনেমা। অসামান্য অভিনয় করেছেন সোহিনী সেন। আর শুধু জাতীয় পুরস্কারে কেন দেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে খুব প্রশংসা পেয়েছে এই সিনেমাটি। সোহিনী সেনের অনবদ্য অভিনয়ের জন্য।
ধীরে ধীরে মঞ্চে উঠলেন সোহিনী সেন। পরনে সাদা লাল পাড় শাড়ি। ম্যাচ করা লাল ব্লাউজ।হালকা করে বাধা খোঁপা। ঠোটে হালকা লাল রংয়ের লিপস্টিক। অপূর্ব দুই ভ্রুর মাঝে ছোট্ট লাল টিপ। মুখে ভুবন ভুলানো হাসি। ব্যক্তিত্বময়ী সোহিনী সেন। পুরস্কার নিয়ে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়ালেন, মঞ্চে অসংখ্য ফটোগ্রাফার মুহূর্তটাকে ক্যামেরাবন্দি করলেন।
আজ যে সোহিনী সেনের স্বপ্ন পূরণের দিন। খুব ছোট থেকে ভালো অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন তার। দীর্ঘ ছয় বছর লড়াই করেছেন শুধু এই দিনটার জন্য। মঞ্চ থেকে তিনি স্পষ্ট দেখলেন দর্শকাসনে বসে আছেন তার বাবা এবং মা।
কিন্তু বাবা মাকে তো সে একবারও এই অনুষ্ঠানে আসার জন্য বলে নি। কোন কার্ডও পাঠায় নি। অবশ্য সে না বললেও তার বাবা-মায়ের এই অনুষ্ঠানে আসাটা খুব একটা কষ্টকর নয়। তার বাবা এদেশের একটা প্রেস্টিজিয়াস ইনস্টিটিউশনের নামকরা সাইন্টিস্ট, মা আই.এ.এস অফিসার। খবরটা অবশ্য সংবাদমাধ্যম থেকে অনেক আগেই সকলে জেনে গিয়েছেন। যেদিন সকল পুরস্কার প্রাপকদের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল।
আজ ঠিক তিন বছর পর সোহিনী তার বাবা-মাকে দেখল।
মুহূর্তেই সে ফিরে গেল বেশ কয়েকবছর আগের দিনগুলোতে। তখন সে কলেজছাত্রী। ইংলিশে অনার্স নিয়ে কলকাতার এক ভালো কলেজে পড়ে। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার সাথে সাথে সে ভারতনাট্যম শিখেছে। পড়াশোনা এবং নাচ ছাড়াও আর যে বিষয়ে সে খুব স্বচ্ছন্দ ছিল সেটা হলো অভিনয়। স্কুলের ড্রামা কম্পিটিশনে সে সবসময় প্রথম হত। ইন্টার স্কুল ড্রামা কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করে সে যেত বিভিন্ন স্কুলে। কলেজের পাঠ শেষ করে অভিনয়কেই সে পেশা হিসেবে গ্রহণ করবে এমনই স্বপ্ন ছিল তার। তবে সে জানতো স্কুল বা কলেজের কম্পিটিশনে অভিনয় করা কে তার বাবা-মা মেনে নিলেও অভিনয়কে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার অনুমতি তারা কখনোই দেবেন না। তাই জন্য মা-বাবাকে লুকিয়েই সোহিনী নিজের পোর্টফোলিও বানিয়েছিল। তারপর গিয়েছিল স্টুডিও পাড়াতে পোর্টফোলিও জমা করতে বিভিন্ন প্রোডাকশন হাউসে।
কিন্তু তবুও কথাটা চাপা থাকলো না। তার মায়ের এক সহকর্মী ঠিক লক্ষ করে ফেললেন। আসলে তার জন্মদিন প্রতিবছর মা-বাবা খুব বড় করে পালন করে। তার বন্ধুরা, মা-বাবার অফিসের লোকজন সবাই আসে প্রতিবছর। মা-বাবার সহকর্মীরা প্রায় সকলেই চেনে সোহিনীকে।
এরপর একদিন মা অফিস থেকে ফিরে সোহিনীকে খুব রেগে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো
------তুমি স্টুডিও পাড়ায় গিয়েছিলে কেন? তুমি কি ভুলে গিয়েছো তুমি কোন বাবা মায়ের সন্তান? তাদের সামাজিক অবস্থান কোথায়?
------ তুমি তো জানো মা, আমি অভিনয় করতে ভালোবাসি। সেই জন্যই স্টুডিও পাড়ায় গিয়েছিলাম পোর্টফোলিও জমা করতে। আর তুমি তো এমন করে স্টুডিও পাড়ার কথা বলছ যেন আমি কোনো নিষিদ্ধ পল্লীতে গিয়েছিলাম।
------ তুমি জানো আজ আমার সহকর্মী ভদ্রলোক ব্যঙ্গাত্মকভাবে হেসে জিজ্ঞাসা করলেন আমাকে " কি ব্যাপার আপনার মেয়ে স্টুডিও পাড়ায় ? সিনেমায় নামতে চায় নাকি?" আমি তো কোনোভাবে ম্যানেজ করলাম। ওনার ছেলে ইউ.এস.এ তে হায়ার স্টাডিজের জন্য গেছে। আর তুমি কিনা পোর্টফোলিও নিয়ে স্টুডিও পাড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছ। কতটা অপমানিত হলাম আমি তুমি বুঝতে পারছ! ধারণা আছে কোন তোমার? তাও যদি জানতাম তোমার বাবা-মা অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত কোনভাবে তাহলেও না হয় কোন কথা ছিল। কিন্তু আমাদের পরিবারের কখনো কেউ অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত নয়। তাও যদি কোন গ্রুপ থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হতে চাও,পড়াশোনার সাথে সাথে একটু স্টেজে উঠে অভিনয় করলে সেটা মেনে নেওয়া যায়। আর তাছাড়া তোমার খারাপ লাগলেও সোহিনী,এটাতো সত্যি যে, তুমি তো আর অপরুপা সুন্দরী নও, শ্যামবর্ণা, সিনেমার জগতে এটা কতটা…….
এবার সোহিনী হেসে বলল
------- তুমি একজন এত শিক্ষিতা মহিলা হয়েও একথা বলছো, মা! সিনেমায় নামা হয় আর স্টেজে ওঠা হয়। এটাই তফাৎ, সেই কথা বলছো তুমি! আর পাশ্চাত্য দেশের কথা না হয় নাই বললাম, হিন্দি এবং বাংলা চলচ্চিত্রেও কিন্তু বেশ কিছু শ্যামবর্ণা অভিনেত্রীই দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করেছেন,প্রশংসা পেয়েছেন। আমি ভালো অভিনয় করি, ভালো নাচ করি, আমি অভিনেত্রী হতে চাই, মা! আর গায়ের রং তো কারোর নিজের হাতে নেই। এটাতো শরীরে মেলানিনের প্রভাব। আর বাস্তবে তো আমরা সকলেই উজ্জ্বল গৌরবর্না নই,তাহলে সিনেমাতে-ই বা সমস্ত অভিনেত্রীকে গৌরবর্ণা হতে হবে কেন?
----- তুমি যতই বল অভিনয়ের সঙ্গে সৌন্দর্যের একটা যোগাযোগ তো আছেই। আর সিনেমা বা স্টেজের তফাৎ শুধু এটাই নয়। সিনেমায় চান্স পেতে গিয়ে মেয়েদের যে কতভাবে এক্সপ্লয়েট হতে হয় সেটা কি তুমি জানো না? আগে তো শুনতাম কাস্টিং কাউচ এখন আবার ওই মি টু মুভমেন্ট। এগুলো কি তোমার অজানা?
------- সব প্রফেশনেরই তো কিছু খারাপ বা ভালো দিক আছে, মা। কিন্তু শুধু খারাপ দিকটা আছে বলে আমি চেষ্টাও করবো না, তা কি করে হয়? তুমি তো জানো অভিনেত্রী হওয়া আমার স্বপ্ন। আর তোমরা যারা এত কষ্ট করে পড়াশোনা করে পরীক্ষায় পাশ করে চাকরি পাও, তাদেরও কি রাজনীতিবিদ বা নেতা-মন্ত্রীদের কথায় কখনো কখনো কম্প্রোমাইজ করতে হয় না? কিছু অর্ধশিক্ষিত মানুষের কাছে মাথা নোয়াতে হয় না? অথবা কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডেও কি মেয়েদের এক্সপ্লয়েট হতে হয় না কখনো-সখনো?
------ এক্সপ্লয়টেশনের কথা যদি ছেড়েই দি সোহিনী, সিনেমা জগতে অভিনেত্রীরা কি একজন অভিনেতার সমান অর্থ উপার্জন করতে পারেন? সম মর্যাদা পান ? সিনেমা জগৎ তো এখনো পুরুষতান্ত্রিক। অনেক সময় তো নায়কদের ইচ্ছাতেই নায়িকারা নির্বাচিত হন। আর নারী কেন্দ্রিক সিনেমা হিন্দি বা বাংলাতে ক'টাই বা তৈরি হয় ? আর কতটাই বা সেগুলো সফলতা পায়? শুধু শুধু নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎটাকে নষ্ট করো না। অনার্স কমপ্লিট করে এম.এ করো। পি.এইচ ডি করো। নেট দাও, কলেজে অথবা ইউনিভার্সিটি'তে পড়াও অথবা সিভিল সার্ভিসের জন্য তৈরি হও, বা বিদেশে গিয়ে যদি পড়াশোনা করতে চাও তাও করতে পারো। পড়াশোনার সময়টা নষ্ট হয়ে গেলে কিন্তু আর ফিরবে না।
এই নিয়ে আমার সাথে আর তর্ক করো না। পরে দেখবে ঠিক সময়ে পড়াশোনাটা না করে, সময় নষ্ট করে শেষে হয়তো ওই হাস্যকর সিরিয়ালগুলোতে ভারি ভারি গহনা পরে, অতিরিক্ত মেকআপ নিয়ে তোমাকে অভিনয় করতে হচ্ছে।
------ মায়ের কথাগুলোতে আশাহত হলেও সোহিনীর অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্নটা তবু মরে যায় নি।সে আশা করেছিল নিশ্চয়ই কোনও না কোনও প্রোডাকশন হাউজ থেকে তাকে ডাকবেই। অন্তত একবার সে তার প্রতিভা দেখানোর সুযোগটা পাবে।
এরপর সে গিয়েছিল তার বাবার কাছে। বাবা তার কলেজজীবনে সিনেমা দেখতে খুব ভালবাসতেন। নাটকও দেখতেন।
বাবা অতটা রুক্ষ ভাবে না বললেও অনুমতিও দেন নি। শুধু বলেছিলেন এখন তো আর সত্যজিৎ রায় ,মৃণাল সেন ,ঋত্বিক ঘটকের মতো পরিচালকরা নেই। আর একটা চারুলতাও তৈরি হবে না। তার থেকে বরং পড়াশোনায মন দিয়ে করো। মা যা বলছে সেটাই শোনো।
এরপর অনেক অপেক্ষা করে থাকলেও, অনেক প্রোডাকশন হাউসে ঘোরাঘুরি করলেও সে সত্যিই একটা সুযোগও পায় নি। কোথাও থেকে তাকে ডাকা হয় নি। পরে অবশ্য তার মনে হয়েছিল এসব বোধহয় মা তার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে করেছেন।
এরপর কলেজের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হবার পর একদিন নিজের স্বপ্নপূরণের জন্য বাড়িতে কাউকে কিছু না জানিয়ে শুধুমাত্র একটা চিঠি লিখে সে মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিল। সে লিখে এসেছিল যে সে এখন প্রাপ্তবয়স্ক, নিজের স্বপ্নপূরণের জন্য সে যাচ্ছে। কোনভাবেই যেন তার মা-বাবা তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা না করে। সম্বল বলতে ছিল কিছু বন্ধু-বান্ধবীরা ঠিকানা আর ফোন নম্বর, যারা মুম্বাই ইউনিভার্সিটিতে পড়তে গিয়েছিল।
বাবা বা মায়ের থেকে কিছুই নিয়ে যায় নি সোহিনী। ঠাম্মা মারা যাওয়ার আগে কিছু শাড়ি আর গহনা দিয়ে গিয়েছিল সোহিনীকে, পরবার জন্য। আসলে সোহিনী ছোট থেকেই শাড়ি,গহনা পরতে খুব ভালোবাসতো। নাচের জন্য আবশ্য লাগতও। ঠাম্মা বড় প্রিয় ছিল তার। ছোটবেলার অনেকটা সময়ই তার কেটেছে ঠাম্মার সাথে। কারণ মা-বাবা দুজনেই ব্যস্ত থাকতো। ঠাম্মা মাঝে মাঝে বলতো কোন বড় কিছু পেতে গেলে ছোট ছোট অনেক জিনিস হয়তো আমাদের ত্যাগ করতে হয়। সেদিনও খুব কষ্ট নিয়ে যেদিন ঠাম্মার দেওয়া গয়নাগুলো সোহিনী বিক্রি করেছিল নিজের স্বপ্নপূরণের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার জন্য। সঙ্গে এনেছিল ঠাম্মার শাড়িগুলো। তার মধ্যে একটা শাড়ি পড়ে আজ সে পুরস্কার গ্রহণ করল। আসলে এই শাড়িটাই তার কাছে ঠাম্মার আশীর্বাদ স্বরূপ।
মুম্বাইতে এসে শুরু হয়েছিল তার লড়াই। বিভিন্ন প্রোডাকশন হাউজে ঘোরাঘুরি। তবে তার বন্ধু-বান্ধবীরা অনেকটাই সাহায্য করেছিল তাকে। কত দিন তো ভালো করে খাওয়া হয়নি,স্নান হয়নি শুধু এক জায়গা থেকে আরে এক জায়গায় দৌড়েছে। সে যে এখানে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় নি এমনটাও নয় কিন্তু তবুও কষ্টের কাছে হার মেনে সে ফিরে যায় নি। অনেক সময় দেখেছে হয়তো কোনো ভালো কাজ চলে গেছে কোন যোগ্যতাহীন ব্যক্তির কাছে শুধুমাত্র তার পারিবারিক পরিচিতির সূত্রে।
তারপর সে ও কাজ পেয়েছে একদিন। প্রথমে কিছু ছোট বিজ্ঞাপনের কাজ করেছে। তারপর ও.টি.টি প্লাটফর্মে কিছু কাজ করেছে।
এখানেই তার কাজ দেখে খুশি হয়ে পরিচালক তাকে এই সিনেমাটির জন্য অফার দিয়েছিলেন কারণ এই চরিত্রটিতে অভিনয়ের সাথে সাথে ভালো নাচ জানাও খুব জরুরি ছিল। বিশেষ করে ভারতনাট্যম। বাকিটা অবশ্য ইতিহাস। অসামান্য সাফল্য পায় সিনেমাটি। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রশংসিত হয় তার অভিনয়,তার নাচ।
মা-বাবার সঙ্গে মাঝেমধ্যে ফোনে কথা হয়েছে তবে শুধু আমি ঠিক আছি, চিন্তা করো না অথবা তোমরা সাবধানে থেকো এর বেশি আর কোন কথাই এগোয় নি। আসলে সন্তানকে নিয়ে গর্ব করার মতো তখনও কিছু করে উঠতে পারে নি সে।
পুরস্কার নিয়ে বেরিয়ে আসার পরই সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে ধরলো। বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করা হল তাকে। খুব সংক্ষেপে সোহিনী বলল "যেকোনো পুরস্কারই কোন অভিনেতা এবং অভিনেত্রীর কাছে খুবই আনন্দের। জাতীয় পুরস্কার তো বটেই কারণ জাতীয় পুরস্কারের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে একটা অন্য সম্মান।"
এবার এক সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করলেন
-------আপনার বাবা-মা দুজনেই তো খুব উচ্চপদে প্রতিষ্ঠিত। আপনি নিশ্চয়ই অভিনয়ের ক্ষেত্রে তাদের থেকে অনেক সাহায্য এবং অনুপ্রেরণা পেয়েছেন?
------- তারা আমার সামনে এই প্রফেশনের সাথে যুক্ত থাকা নেগেটিভ দিকগুলি দেখিয়ে দিয়েছিলেন শুধুমাত্র। নেগেটিভ দিক নেই এমনটাও আমি বলছি না তবে পজেটিভ দিকটা আমাকে নিজেকেই খুঁজে নিতে হয়েছে। লক্ষ্য যদি স্থির থাকে তাহলে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য সুযোগটা একদিন নিশ্চয়ই আসবে বলে আমার বিশ্বাস ছিল। শুধু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে এই যা।
সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রশ্ন-উত্তর-পর্ব সেরেই একটু এগোতেই সোহিনী দেখল তার বাবা-মা দাঁড়িয়ে আছেন।
প্রথমে তার বাবা ই এগিয়ে এসে সোহিনী কে বলল
-------জানি তুমি আমাদেরকে আসতে বলো নি তাও আজ আমরা এসেছি অনাহুতের মতোই। কিন্তু মা,যদি সন্তান কোন ভুল করলে বাবা-মা তাকে শাসন করে শুধরে দিতে পারে তাহলে বাবা-মা যদি কোন ভুল করে থাকে, ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে,তা হলে সন্তানের সেই ভুল শুধরে দেওয়ার অধিকার আছে।
আজ তুমি নিজের চেষ্টায় অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করে দেশের সেরা অভিনেত্রী হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মানটা পেয়ে, আমরা যে ভুল ছিলাম সেটা প্রমাণ করে দিয়েছো। সেটা আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি। এরপরেও কি আমাদের ক্ষমা করা যায় না? ভুল তো মানুষ মাত্রই হয় মা, আমাদেরও হয়েছিল। আমরা তোমার লড়াইয়ের সময় তোমার পাশে থাকি নি। যেটা বাবা মা হিসেবে আমাদের করা উচিত ছিল।
এবার সোহিনীর মনে জমে থাকা অভিমানের বরফের পাহাড়টা গলে গেল।কতদিন পর সে বাবা-মাকে দেখল। বাবা মায়ের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে জড়িয়ে ধরল দু'জনকেই। তারপর সোহিনী বলল
------ মা,শুধু তোমার ওই সহকর্মীকে আমার সিনেমায় নামার দরুন পাওয়া সেরা জাতীয় অভিনেত্রীর পুরস্কারের ছবিগুলো আলাদা করে পাঠিয়ে দিও, যদিও সংবাদপত্রে তো ছবি থাকবেই। বলে দিও সিনেমায় নেমেও সম্মান অর্জন করা যায়।